কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা.....
দিন রাত্রি পার হয়ে,জন্ম মরণ পার হয়ে,মাস,বর্ষ,মন্বন্তর, মহাযুগ পার হয়ে চলে যায়.....তোমাদের মর্মর জীবন-স্বপ্ন শেওলা-ছাতার দলে ভরে আসে, পথ আমার তখনও ফুরোয় না...চলে...চলে...এগিয়েই চলে...অজানা গন্তব্যের দিকে...
Thursday, November 28, 2019
[২]আরণ্যক রিভিও
#বই রিভিও ২
বই - আরণ্যক
লেখক - বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান লেখক বিভূতিভূষণ এর একটি কালজয়ী সৃষ্টি আরণ্যক। এটি এমন একটি বই, যা হাতে নিয়ে আপনি শেষ না করে উঠতে পারবেন না। চলুন, জেনে নেই কিছু বিবরণী, যাতে আপনারা বুঝতে পারেন আমার কথার সত্যতা :D
উপন্যাস এর প্রধান চরিত্র সত্যচরন। ভাগালপুর এর কাছাকাছি একটি জংগলে, এস্টেট এর পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়। শহুরে সভ্যতার ছেলে সত্যচরণ এর জংগলের জীবনযাপনে মানিয়ে নেওয়াটা এক কথায় অসম্ভব ছিলো। যা নিয়ে তার নিজের মনেও অনেক দ্বিধা ছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে এ বন, লোকালয়ের সৌন্দর্যের বাতাস তার মনে লেগে গেলো। ধীরে ধীরে এখানকার আদিবাসী ও স্থানীয় দের সাথে তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। একটা সময় এ মানুষগুলোর জীবনমান এর উন্নতি চাওয়ার অপরাধে জমিদার এর সাথে মনোমালিন্য ঘটে সত্যচরণের। তার পরিপ্রেক্ষিত এ নানান ঘটনার মধ্য দিয়ে সে তার চাকরী হারায়।
কিন্তু ততদিনে ওই শহুরে সত্যচরণ এর বুকে বেধে বসে এই বন, বনের মানুষ।
তাদের মায়া সে কিছুতেই ছাড়তে পারেনা। যেতে ইচ্ছে হয়না, তাদের ছেড়ে।
শেষে কি হলো?? জানতে চাইলে পড়ে ফেলুন, অসাধারণ এই উপন্যাস টি :)
[১]পথের পাঁচালি রিভিও
#বই রিভিও ১
বই: পথের পাঁচালি
লেখক: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ:১৯২৯ সালে
কাহিনী সংক্ষেপ :
হরিহর-সর্বজয়ার দরিদ্র সংসার। সেই সংসারের অপু আর দূর্গা মধ্যমনি।
দূর্গা পিসিমা ভক্ত হলেও মায়ের দুই চোখের বিষ ছিল পিতিমা।তবুও দূর্গা পিতিমাকে খুব বেশি ভালোবাসত।
মুখচোরা ও লাজুক স্বভাবের অপু যেন খুবই অভিমানি। মায়ের সাথে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলেও ভাই পাগল দূর্গা চিন্তায় মরে। খুঁজে বাসায় নিয়ে আসে।
দুই ভাই বোন মিলে অন্যের আমবাগান বা ফল বাগান হতে ফল কুড়িয়ে আনে,
অভাবি সংসারের অভাব মুছনের জন্যে হরিহরা বিদেশ পাড়ি দেয়।
হরিহর একবার বিদেশ গেলে মাত্র কয়েকদিনের খাবার রেখে যায়। তা দিয়ে সর্বজয়া টেনে টুনে সংসার চালাতে লাগল। খাবার প্রায় ফুরিয়ে গেলেও হরিহরার কোন খোজ মিলল না। বেঁচে আছে কি না তাও জানি না। বৃষ্টির সাথে দূর্গার ভিষন জ্বর। দিন দিন বৃষ্টি বাড়তে থাকে আর দূর্গার জ্বর যেন কঠিন আকার ধারন করে। মধ্য রাতে সর্ব জয়া দেখতে পারে চাল বেয়ে দুর্গা আর অপুর শরীর ভিজে একাকার।
একটা চিঠি, দুইটা চিঠি, একে একে তিনটা চিঠি পাটানোর পরেও হরিহরের খবর পাওয়া গেল না।
হরিহর যখন বাসায় ফিরল তখন আর দূর্গা এই দুনিয়ায় ছিল না। যাওয়ার আগে অপুকে বলে
ভাই আমাকে ট্রেনে চড়াবি।
অল্প কিছুদিন পরেই নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে কাশিতে গেলো দুঃখ মুছানোর জন্যে কিন্তু তাদের দুঃখ পিছু ছাড়ল না।
হরিহর পারগমন করার পর পাঞ্জাবী পরিবার অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রপ্ত বইপোকা অপুদের পরিবার সামলিয়ে নেয়। অল্প কিছুদিন বর ব্রামন বিধবা সর্বজয়া একটা বাসায় কাজ পেয়ে গেলদ হাফ ছেড়ে বাচঁল।
সেখানে গিয়ে লিলির সাথে পরিচয় হয়। বিরাট বাড়িতে একমাত্র লিলিই তার সাথে কথা বলে। এক গ্লাস দুধ দুই জন ভাগ করে খায়। অপুর থেকে দুই বছরের ছোট হলেও লজ্জা নাই বলতেই চলে। কিন্তু অল্প দিন পর সেই মেয়েটাও চলে যায় তবে আবার ফিরে আসে। এবারের ফিরে আসায় থাকে চমক।
পাঠক প্রতিক্রিয়া:
ঘুমের মধ্যেও নিজেকে অপু বলে ভেবেছি। স্বপ্নে দেখেছি অপু কিভাবে বই পড়ছে। স্কুল বা কলেজে ভর্তি না হয়েও যে বই পোকা হওয়া যায় সে শিক্ষা পেয়েছি পথেরপাঁচালির আসল চরিত্র অপুর মাধ্যমে। প্রথমে দূর্গাকে আসল ভাবলেও সে কাঁদিয়ে হারিয়ে যায়। তারপর মুখচোরা অপুই হয় আসল চরিত্র। যে কিনা সারাদিন জঙ্গলে ভড়া, পুকুর পাহাড়া দেয়ার বিনিময়ে একটা করে বই নেয়। প্রত্যেক বইপোকারা মনে হয় এমনি হয়।
বইটা শেষ করে মাথা থেকে অপুকে সরাতে পারিনি। জানিনা কয়দিন থাকবে।
এই বইটা হাসিয়েছে আবার কাঁদিয়েছে। হতাশ করে আবার আশার আলো দেখিয়েছে। কখনো মনে হয়নি বিফলে যাব। যত সময় ছিলাম অপুর স্থানে নিজেকে বসিয়ে ভাবছি। অপুর অবুজ চরিত্রটার প্রেমে যে কোন মেয়ে পড়ে যাবে। যদিও মেয়েরা বই পাগল ছেলেদের পছন্দ খুব একটা করে।
তবে অপুর সাথে আমার খুবই সাদৃশ্য রয়েছে অপুও মুখচোর, আমিও, অপু উন্নত মানের বইপোকা আমি নিম্ন মানের তবুও দুইজন বইপোকা।
রেটিং :৫/৫
ক্ষমাপ্রর্থী: ৯৯% লোকের পছন্দের একটা বই। তাই ভুল কিছু বলে থাকলে খুবই দুঃখিত।
হ
Wednesday, September 4, 2019
A brief history of Rubiks cube
রুবিক’স কিউবের মজা !
.
.
.
আমরা অনেকেই হয়তো এই বিশেষ 3D Puzzle নিয়ে নাড়াচাড়া করেছি। আবার অনেকে হয়তো অন্য কারও হাতে দেখেছি। সুন্দর দেখতে এই বিশেষ বস্তুটির নাম হল রুবিক’স কিউব। ১৯৭৪ সালে হাঙ্গেরিয়ান স্থপতি প্রফেসর Ernő Rubik এটি উদ্ভাবন করেন। তখন এর নাম দেয়া হয় ম্যাজিক কিউব (Magic Cube)। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে এটির নাম পরিবর্তন করা হয়। আবিষ্কারকের নামানুসারে রাখা হয়- রুবিক’স কিউব (Rubik’s Cube)। তবে এখনও ম্যাজিক কিউব নামটা প্রচলিত।
.
রুবিক’স কিউবের ইতিহাস জানা তো হল। এবার কিছুটা মজা করা যাক। যাদের কাছে রুবিক’স কিউব আছে, তাদের কাছে একটা প্রশ্ন। আপনি কি কখনও কিউবটি মেলাতে পেরেছেন? (শেখা ছাড়া)। যাদের কাছে কিউব নেই, তারা যদি ভেবে থাকেন এ আর এমন কি কঠিন কাজ, ঘুরাতে ঘুরাতে কিউব একসময় অবশ্যই মিলে যাবে! যারা এরকম চিন্তা করছেন, তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারবেন এটা আদৌ সম্ভব কিনা। রুবিক’স কিউব আসলে ২৬টি ক্ষুদ্রাকার কিউবের সমন্বয়ে তৈরি, যাকে বলে কিউবিস বা কিউবলেটস (cubies or cubelets)। এদের মধ্যে রয়েছে ৬ টি সেন্টার কিউবি বা সেন্টার পিস (center piece), ১২টি এজ পিস (edge piece) এবং ৮টি কর্নার পিস (corner piece)। কেবলমাত্র ৬ টি সেন্টার পিস ছাড়া বাকি সবাই নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। তবে এখানেও কিছু ব্যাপার আছে। এজ পিসগুলো কখনও কর্নারে বা কর্নার পিসগুলো কখনও মাঝখানে চলে আসতে পারে না।
.
.
এবার আসি, বিখ্যাত এই কিউবটির বিন্যাস প্রসঙ্গে। রুবিক’স কিউবের ৮টি কর্নার পিস ৮! উপায়ে বিন্যস্ত হতে পারে। আবার প্রতিটি কর্নার পিসে ৩টি রঙ থাকে, অর্থাৎ প্রতিটি কর্নার পিস কোন নির্দিষ্ট অবস্থানেই ৩টি পৃথক বিন্যাস তৈরি করতে পারে। তারমানে রঙের ভিন্নতার জন্য এর বিন্যাস সংখ্যা হবে ৩^৮। অর্থাৎ, শুধু কর্নার পিসগুলোই ৮!x৩^৮ উপায়ে বিন্যাস্ত হতে পারে। একইভাবে, এজ পিসগুলো বিন্যস্ত হতে পারে ১২!x২^১২ উপায়ে। সেন্টার পিসগুলো বিবেচনার বাইরে, কারণ তাদের অবস্থান অপরিবর্তনীয়। তাহলে আমরা যেটা পাচ্ছি তা হল, একটি রুবিক’স কিউব সর্বমোট ৮!x৩^৮x১২!x২^১২ = ৫১৯,০২৪,০৩৯,২৯৩
,৮৭৮,২৭২,০০০ (প্রায় ৫১৯ কুইন্টিলিয়ন) ভাবে বিন্যস্ত হতে পারে! [১ কুইন্টিলিয়ন = ১০^১৮] দাঁড়ান, হিসাব এখনও বাকি আছে। কেননা রুবিক’স কিউব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কখনোই এর সম্ভাব্য সকল বিন্যাস পাওয়া সম্ভব না।
.
.
এর কারণগুলো হল-
.
১। বৈধ উপায়ে কখনোই একটি কিউবকে ঘুরিয়ে তার এজ পিসকে উল্টিয়ে ফেলা সম্ভব না। তারমানে এক্ষেত্রে এজ পিসগুলোর মোট বিন্যাসের ১/২ অংশ বিন্যাস সঠিক হবে।
২। কিউব ঘুরিয়ে কখনও একটি কর্নার পিসকে উল্টিয়ে ফেলা যায় না। ফলে কর্নার পিসগুলোর মোট বিন্যাসের ১/৩ অংশ বিন্যাস সঠিক হবে।
৩। যেকোনো দুটি কিউবি বা পিসের পারস্পরিক অবস্থান পরিবর্তন করা যায় না। এর মানে হল কোন একটি নির্দিষ্ট রঙের এজ পিসকে অন্য আরেকটি রঙের এজ পিস দ্বারা প্রতিস্থাপন করা যায় না। একইভাবে কোন একটি নির্দিষ্ট অবস্থানের কর্নার পিসকে অন্য আরেকটি কর্নারে বসানো যায় না। এক্ষেত্রে ১/২ অংশ হবে কিউবির বিন্যাসের সঠিক parity.
.
(উপরের এই কাজগুলো কখনোই বৈধ উপায়ে করা যায় না। তবে আপনি যদি পিসগুলোকে খুলে এই নিষিদ্ধ কাজগুলো করেন, তাহলে অবশ্য অন্য কথা। সেক্ষেত্রে আপনাদের একটা কথা বলে রাখি, এই অবস্থায় আপনি জীবনেও কিউবটি মেলাতে পারবেন না।) তো এখন আমরা পাচ্ছি-
.
(৮!x৩^৮x১২!x২^১২)/২x৩x২ = ৪৩,২৫২,০০৩,২৭৪,৪৮৯,৮৫৬,০০০ (প্রায় ৪৩ কুইন্টিলিয়ন)
.
এই ৪৩ কুইন্টিলিয়ন বিন্যাসের মধ্যে শুধুমাত্র একটি বিন্যাসেই কিউবটি মেলানো অবস্থায় থাকে। সুতরাং ভাগ্যের জোরে রুবিক’স কিউব সমাধান করার সম্ভাব্যতা হল-
.
(১)/(৪৩,২৫২,০০৩,২৭৪,৪৮৯,৮৫৬,০০০) = ০.০০০০০০০০০০০০০০০০০০০২৩১২
.
এটি এতই ক্ষুদ্র সংখ্যা যে, এটাকে শূন্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তারমানে ভাগ্যের জোরে রুবিক’স কিউব সমাধান করার সম্ভাব্যতা ০, অর্থাৎ সম্পূর্ণ অসম্ভব। তাই আপনি যদি চিন্তা করেন, ঘুরাতে ঘুরাতে এক সময় কিউবটি মিলে যাবে- সেরকম ঘটনা কখনোই হবে না।
.
.
আপনাদের আরও একটা মজার তথ্য দেই। প্রতি সেকেন্ডে একবার ঘুরিয়ে রুবিক’স কিউবের সমস্ত সম্ভাব্য বিন্যাস তৈরি করতে ১৪০০ ট্রিলিয়ন বছর সময় লেগে যাবে যেখানে এই মহাবিশ্বের বয়সই মাত্র ১৪ বিলিয়ন বছর!
.
মূলত রুবিক’স কিউবের আবিষ্কার হয়েছিল গণিতের হাত ধরে। গণিতের অনেক বিষয় ব্যাখ্যা করতেও তাই রুবিক’স কিউব ব্যবহার করা হয়। বিন্যাস, Parity, গ্রুপ থিওরি, Lagrange’s theorem, Cayley Graphs, সুপারফ্লিপ- এরকম আরও অনেক কিছুর ব্যাখ্যাতেই এটি ব্যবহার করা হয়। আবার রুবিক’স কিউব সমাধানের কৌশলও বের হয়েছে গণিতের মাধ্যমেই।
.
.
রুবিক’স কিউব সমাধানের অনেক পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এদের মধ্যে Layer by Layer method, Corner First method, Fridrich method (CFOP), Roux method, Petrus method, Waterman method, Heise method বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রুবিক’স কিউব বিশ্বে একটি জনপ্রিয় puzzle game হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে রুবিক’স কিউবের বিশ্বরেকর্ডটি (single) চায়নার Yusheng Du এর দখলে। তিনি মাত্র ৩.৪৭ সেকেন্ডে মিলিয়ে রেকর্ডটি করেন। এছাড়া রুবিক’স কিউবের (average) বিশ্বরেকর্ড করেছেন অস্ট্রেলিয়ার Feliks Zemdegs (৫.৬৯ সেকেন্ড)।
.
বিশ্বে খুব কম মানুষই রুবিক’স কিউব মেলাতে পারে।মজার কথা হচ্ছে আমি ও তাদের মধ্যে একজন। আপনিও চেষ্টা করুন সেই অল্প সংখ্যক মানুষদের মধ্যে থাকার। আর আপনারা যারা রুবিক’স কিউব মেলানোকে ‘বাচ্চাদের খেলা’ বলে থাকেন, তারা একবার মেলানোর চেষ্টা করেই দেখুন না! ব্যাপক মজা পাবেন!!
.
.
সূত্রঃ Mathematics of the Rubik’s Cube by W. D. Joyner
.
.
.
আমরা অনেকেই হয়তো এই বিশেষ 3D Puzzle নিয়ে নাড়াচাড়া করেছি। আবার অনেকে হয়তো অন্য কারও হাতে দেখেছি। সুন্দর দেখতে এই বিশেষ বস্তুটির নাম হল রুবিক’স কিউব। ১৯৭৪ সালে হাঙ্গেরিয়ান স্থপতি প্রফেসর Ernő Rubik এটি উদ্ভাবন করেন। তখন এর নাম দেয়া হয় ম্যাজিক কিউব (Magic Cube)। পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে এটির নাম পরিবর্তন করা হয়। আবিষ্কারকের নামানুসারে রাখা হয়- রুবিক’স কিউব (Rubik’s Cube)। তবে এখনও ম্যাজিক কিউব নামটা প্রচলিত।
.
রুবিক’স কিউবের ইতিহাস জানা তো হল। এবার কিছুটা মজা করা যাক। যাদের কাছে রুবিক’স কিউব আছে, তাদের কাছে একটা প্রশ্ন। আপনি কি কখনও কিউবটি মেলাতে পেরেছেন? (শেখা ছাড়া)। যাদের কাছে কিউব নেই, তারা যদি ভেবে থাকেন এ আর এমন কি কঠিন কাজ, ঘুরাতে ঘুরাতে কিউব একসময় অবশ্যই মিলে যাবে! যারা এরকম চিন্তা করছেন, তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারবেন এটা আদৌ সম্ভব কিনা। রুবিক’স কিউব আসলে ২৬টি ক্ষুদ্রাকার কিউবের সমন্বয়ে তৈরি, যাকে বলে কিউবিস বা কিউবলেটস (cubies or cubelets)। এদের মধ্যে রয়েছে ৬ টি সেন্টার কিউবি বা সেন্টার পিস (center piece), ১২টি এজ পিস (edge piece) এবং ৮টি কর্নার পিস (corner piece)। কেবলমাত্র ৬ টি সেন্টার পিস ছাড়া বাকি সবাই নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। তবে এখানেও কিছু ব্যাপার আছে। এজ পিসগুলো কখনও কর্নারে বা কর্নার পিসগুলো কখনও মাঝখানে চলে আসতে পারে না।
.
.
এবার আসি, বিখ্যাত এই কিউবটির বিন্যাস প্রসঙ্গে। রুবিক’স কিউবের ৮টি কর্নার পিস ৮! উপায়ে বিন্যস্ত হতে পারে। আবার প্রতিটি কর্নার পিসে ৩টি রঙ থাকে, অর্থাৎ প্রতিটি কর্নার পিস কোন নির্দিষ্ট অবস্থানেই ৩টি পৃথক বিন্যাস তৈরি করতে পারে। তারমানে রঙের ভিন্নতার জন্য এর বিন্যাস সংখ্যা হবে ৩^৮। অর্থাৎ, শুধু কর্নার পিসগুলোই ৮!x৩^৮ উপায়ে বিন্যাস্ত হতে পারে। একইভাবে, এজ পিসগুলো বিন্যস্ত হতে পারে ১২!x২^১২ উপায়ে। সেন্টার পিসগুলো বিবেচনার বাইরে, কারণ তাদের অবস্থান অপরিবর্তনীয়। তাহলে আমরা যেটা পাচ্ছি তা হল, একটি রুবিক’স কিউব সর্বমোট ৮!x৩^৮x১২!x২^১২ = ৫১৯,০২৪,০৩৯,২৯৩
,৮৭৮,২৭২,০০০ (প্রায় ৫১৯ কুইন্টিলিয়ন) ভাবে বিন্যস্ত হতে পারে! [১ কুইন্টিলিয়ন = ১০^১৮] দাঁড়ান, হিসাব এখনও বাকি আছে। কেননা রুবিক’স কিউব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কখনোই এর সম্ভাব্য সকল বিন্যাস পাওয়া সম্ভব না।
.
.
এর কারণগুলো হল-
.
১। বৈধ উপায়ে কখনোই একটি কিউবকে ঘুরিয়ে তার এজ পিসকে উল্টিয়ে ফেলা সম্ভব না। তারমানে এক্ষেত্রে এজ পিসগুলোর মোট বিন্যাসের ১/২ অংশ বিন্যাস সঠিক হবে।
২। কিউব ঘুরিয়ে কখনও একটি কর্নার পিসকে উল্টিয়ে ফেলা যায় না। ফলে কর্নার পিসগুলোর মোট বিন্যাসের ১/৩ অংশ বিন্যাস সঠিক হবে।
৩। যেকোনো দুটি কিউবি বা পিসের পারস্পরিক অবস্থান পরিবর্তন করা যায় না। এর মানে হল কোন একটি নির্দিষ্ট রঙের এজ পিসকে অন্য আরেকটি রঙের এজ পিস দ্বারা প্রতিস্থাপন করা যায় না। একইভাবে কোন একটি নির্দিষ্ট অবস্থানের কর্নার পিসকে অন্য আরেকটি কর্নারে বসানো যায় না। এক্ষেত্রে ১/২ অংশ হবে কিউবির বিন্যাসের সঠিক parity.
.
(উপরের এই কাজগুলো কখনোই বৈধ উপায়ে করা যায় না। তবে আপনি যদি পিসগুলোকে খুলে এই নিষিদ্ধ কাজগুলো করেন, তাহলে অবশ্য অন্য কথা। সেক্ষেত্রে আপনাদের একটা কথা বলে রাখি, এই অবস্থায় আপনি জীবনেও কিউবটি মেলাতে পারবেন না।) তো এখন আমরা পাচ্ছি-
.
(৮!x৩^৮x১২!x২^১২)/২x৩x২ = ৪৩,২৫২,০০৩,২৭৪,৪৮৯,৮৫৬,০০০ (প্রায় ৪৩ কুইন্টিলিয়ন)
.
এই ৪৩ কুইন্টিলিয়ন বিন্যাসের মধ্যে শুধুমাত্র একটি বিন্যাসেই কিউবটি মেলানো অবস্থায় থাকে। সুতরাং ভাগ্যের জোরে রুবিক’স কিউব সমাধান করার সম্ভাব্যতা হল-
.
(১)/(৪৩,২৫২,০০৩,২৭৪,৪৮৯,৮৫৬,০০০) = ০.০০০০০০০০০০০০০০০০০০০২৩১২
.
এটি এতই ক্ষুদ্র সংখ্যা যে, এটাকে শূন্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তারমানে ভাগ্যের জোরে রুবিক’স কিউব সমাধান করার সম্ভাব্যতা ০, অর্থাৎ সম্পূর্ণ অসম্ভব। তাই আপনি যদি চিন্তা করেন, ঘুরাতে ঘুরাতে এক সময় কিউবটি মিলে যাবে- সেরকম ঘটনা কখনোই হবে না।
.
.
আপনাদের আরও একটা মজার তথ্য দেই। প্রতি সেকেন্ডে একবার ঘুরিয়ে রুবিক’স কিউবের সমস্ত সম্ভাব্য বিন্যাস তৈরি করতে ১৪০০ ট্রিলিয়ন বছর সময় লেগে যাবে যেখানে এই মহাবিশ্বের বয়সই মাত্র ১৪ বিলিয়ন বছর!
.
মূলত রুবিক’স কিউবের আবিষ্কার হয়েছিল গণিতের হাত ধরে। গণিতের অনেক বিষয় ব্যাখ্যা করতেও তাই রুবিক’স কিউব ব্যবহার করা হয়। বিন্যাস, Parity, গ্রুপ থিওরি, Lagrange’s theorem, Cayley Graphs, সুপারফ্লিপ- এরকম আরও অনেক কিছুর ব্যাখ্যাতেই এটি ব্যবহার করা হয়। আবার রুবিক’স কিউব সমাধানের কৌশলও বের হয়েছে গণিতের মাধ্যমেই।
.
.
রুবিক’স কিউব সমাধানের অনেক পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এদের মধ্যে Layer by Layer method, Corner First method, Fridrich method (CFOP), Roux method, Petrus method, Waterman method, Heise method বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রুবিক’স কিউব বিশ্বে একটি জনপ্রিয় puzzle game হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে রুবিক’স কিউবের বিশ্বরেকর্ডটি (single) চায়নার Yusheng Du এর দখলে। তিনি মাত্র ৩.৪৭ সেকেন্ডে মিলিয়ে রেকর্ডটি করেন। এছাড়া রুবিক’স কিউবের (average) বিশ্বরেকর্ড করেছেন অস্ট্রেলিয়ার Feliks Zemdegs (৫.৬৯ সেকেন্ড)।
.
বিশ্বে খুব কম মানুষই রুবিক’স কিউব মেলাতে পারে।মজার কথা হচ্ছে আমি ও তাদের মধ্যে একজন। আপনিও চেষ্টা করুন সেই অল্প সংখ্যক মানুষদের মধ্যে থাকার। আর আপনারা যারা রুবিক’স কিউব মেলানোকে ‘বাচ্চাদের খেলা’ বলে থাকেন, তারা একবার মেলানোর চেষ্টা করেই দেখুন না! ব্যাপক মজা পাবেন!!
.
.
সূত্রঃ Mathematics of the Rubik’s Cube by W. D. Joyner
Subscribe to:
Posts (Atom)
[২]আরণ্যক রিভিও
#বই রিভিও ২ বই - আরণ্যক লেখক - বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান লেখক বিভূতিভূষণ এর একটি কালজয়ী সৃষ্টি আরণ্যক। এটি এমন ...
-
রুবিক’স কিউবের মজা ! . . . আমরা অনেকেই হয়তো এই বিশেষ 3D Puzzle নিয়ে নাড়াচাড়া করেছি। আবার অনেকে হয়তো অন্য কারও হাতে দেখেছি। সুন্দর দ...
-
#বই রিভিও ২ বই - আরণ্যক লেখক - বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান লেখক বিভূতিভূষণ এর একটি কালজয়ী সৃষ্টি আরণ্যক। এটি এমন ...
-
#বই রিভিও ১ বই: পথের পাঁচালি লেখক: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম প্রকাশ:১৯২৯ সালে কাহিনী সংক্ষেপ : হরিহর-সর্বজয়ার দরিদ্র সংসার। সেই স...